সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের এই ঘটনা। সেখানে প্রতিদিন গড়ে তিনজন ডাইনি অপবাদে হত্যা শিকারের ঘটনা ঘটে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত ২২ বছরে এই রাজ্যে ডাইনি অপবাদে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা। ভারতের রাজ্যে রাজ্যে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুন বা মারধরের অভিযোগ উঠে আসে বিভিন্ন পত্রিকায়। তবে কুসংস্কারে ডাইনি অপবাদে সবচেয়ে মৃত্যুতে এগিয়ে ঝাড়খণ্ড। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে প্রতিদিন গড়ে তিনজন ডাইনি অপবাদে হত্যা শিকারের ঘটনা ঘটে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ২৪ জন ডাইনি কুসংস্কারে মারা গেছে। এছাড়া গত ২ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার লুকিয়া গ্রামে এক নারীকে ডাইনি অপবাদে স্থানীয়দের পিটুনিতে মৃত্যু হয় তার। মাকে রক্ষা করতে ছুটে যান অজয় ও সঞ্জয় ওঁরাও নামে দুই ছেলে।

রক্ষা পাননি তারাও। তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে চলে নির্মম প্রহার। দুই ভাই গুরুতর আহত হন। এখন অজয়ের চোখটাই নষ্ট হওয়ার পথে। এই ঘটনায় পুলিশ যে অভিযোগ দায়ের করে সেখানে মূল অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং পঞ্চায়েত প্রধান। সব মিলিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।

ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি সন্দেহে খুনের ঘটনা ৩৫টি। সিআইডি’র রিপোর্টও বলছে, ২০১৫ সালে ডাইনি সন্দেহে ৪৬ জন নারীকে পিটিয়ে মারা হয়।
এদিকে, ‘কালাজাদু’ জানতেন অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি খুনতি জেলার অদকি থানার তিরলা গ্রামে এক যুগলকে পিটিয়ে হত্যা করেন প্রতিবেশীরা। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ফের ১২ জানুয়ারি ডাইনি সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় অভিযুক্তের বয়ান অনুযায়ী ঝড়িয়ো নামে এক প্রতিবেশীর ‘কুনজরে’- অকালে মারা যান তার স্ত্রী। এখনও রাঁচির এক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী।

ঝাড়খণ্ডে ২৭ জানুয়ারি আরও একটি হত্যা কাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ওই নারীকে হত্যা করে মরদেহ লুকিয়ে রাখে অভিযুক্তরা। এরপর মরদেহ খুনতি থানা এলাকার একটি নির্জন জঙ্গলে ফেলে রাখেন চার অভিযুক্ত। এই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পেশায় নার্স! পুলিশি জেরায় সালোমি মিজ নামে ওই নার্স জানান- হঠাৎ তার ছেলের মৃত্যু হয়। নার্সের ঘোর সন্দেহ, নোরা লকড়া নামে তার ভাড়াটে ডাকিনী বিদ্যা করে তার ছেলেকে মেরে ফেলেছেন!

ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি সন্দেহে খুনের ঘটনা ৩৫টি। সিআইডি’র রিপোর্টও বলছে, ২০১৫ সালে ডাইনি সন্দেহে ৪৬ জন নারীকে পিটিয়ে মারা হয়। একইভাবে ২০১৬ সালে ৩৯, ২০১৭ সালে ৪২, ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ২৭ এবং ২০২০ সালে ২৮ জন এই ডাইনি অপবাদের বলি হন। ২০২১ সালের পুরো তালিকা এখনও আসেনি। তবে এ পর্যন্ত ২৪টি খুনের মামলা হয়েছে।

 

কলমকথা/সাথী